বিদ্যুৎ গ্যাস ও তেলের দাম নিয়ে এযাবৎকালের সেরা সুখবর


বিদ্যুৎ গ্যাস ও তেলের দাম নিয়ে এযাবৎকালের সেরা সুখবর



আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ জ্বালানি তেল বিক্রিতে অটোমেশনে যেতে হবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি)। এ ছাড়া জ্বালানি তেলে ভর্তুকি তুলে দিতে হবে। একই সঙ্গে পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ভর্তুকিও তুলে নিতে হবে। বাংলাদেশ সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে গতকাল জ¦ালানি বিভাগে এ আলোচনা হয়েছে। জ্বালানি বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

দেশের জ¦ালানি খাতের বর্তমান অবস্থা, গ্যাসের উৎপাদন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, আয়-ব্যয়ের হিসাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব- এমন নানা বিষয়ে জানতে চেয়েছে আইএমএফ। আইএমএফের প্রতিনিধি দল গতকাল দিনভর জ¦ালানি বিভাগের সঙ্গে এবং বিপিসির সঙ্গে বৈঠক করে। জ্বালানি বিভাগ এবং বিপিসি সূত্রে জানা যায়, আইএমএফ প্রতিনিধি দল মূলত আগের সফরের বিভিন্ন পরামর্শের অগ্রগতি জানতে চেয়েছে। আর বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ভর্তুকি তুলে দেওয়ার পরার্মশ দিয়েছে। বিশেষ করে জ্বালানি তেল বিক্রিতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মিল করে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই অটোমেশনে যাওয়ার পরার্মশ দিয়েছে। বৈঠকে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব ড. মোহাম্মদ খায়েরুজ্জামান মজুমদার ও অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিতি ছিলেন।


এ ছাড়া আইএমএফের উপবিভাগীয় প্রধান পিয়াপাওর্ন নিক্কি সোদশ্রিইবুন, অর্থনীতিবিদ জেনেট জিনাবউ, আবাসিক প্রতিনিধি জায়েন্দু ডি, সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ইয়েটলে এক্সজিও লিও, অর্থনীতিবিদ রিচার্ড ভারগেস, অর্থনীতিবিদ ইয়ারোস্লাব হুল, নির্বাহীর উপদেষ্টা রাজভী জেইন, অর্থনীতিবিদ সাইফুল ইসলাম, সিকিউরিটি কনসালট্যান্ট রিচার্ড মিটসেল উপস্থিত ছিলেন।


জ¦ালানি সচিব বলেন, এটা একটা রুটিন ওয়ার্ক। জ¦ালানি খাতের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বৈঠক সূত্র জানায়, জ¦ালানি খাতে সরকারের ঘাটতি (লোকসান) এবং ভর্তুকির বিষয়টি বুঝতে চায় আইএমএফ। এ জন্য তারা বিপিসি, পেট্রোবাংলা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান লাভে নাকি লোকসানে আছে তা জানতে চেয়েছে। জ¦ালানি বিক্রিতে যে লোকসান তা কীভাবে পূরণ হচ্ছে? এই অর্থের উৎস কী তাও জানতে চায়। এক কথায় এ খাতের পুরো আর্থিক চিত্র সম্পর্কে জানতে চায় তারা। পাশাপাশি নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হচ্ছে কিনা? স্থলভাগে ও সাগরে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কেও জানতে চাওয়া হয় ওই বৈঠকে। বর্তমানে গ্যাসের উৎপাদন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও জ¦ালানি তেল আমদানি এবং সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কী ধরনের প্রভাব পড়ছে তাও জানতে চায় প্রতিনিধি দলটি।


জ¦ালানি বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকার জ¦ালানি খাতে ভর্তুকি না বাড়িয়ে তা আস্তে আস্তে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়েছে। এ জন্য ইতোমধ্যে দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন বিশ^বাজারে জ¦ালানি তেল ও গ্যাসের দাম কম থাকায় দেশের বাজারে কোনো ভর্তুকি নেই।


বাংলাদেশকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদনের প্রায় তিন মাস পর ঢাকায় স্টাফ কনসালটেশন মিশন পাঠায় আইএমএম। ঋণের প্রথম কিস্তির ব্যবহার এবং দ্বিতীয় কিস্তি দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে আইএমএফের একটি দল গত ২৫ এপ্রিল ঢাকায় আসে। আগামী ২ মে পর্যন্ত তারা দেশে অবস্থান করবেন।


ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন খাত সংস্কারে আইএমএফের যে সুপারিশ তা বাংলাদেশ কতটা বাস্তবায়ন করছে সেটি পর্যালোচনাই এই প্রতিনিধি দলের প্রধান লক্ষ্য। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফের অন্যতম শর্ত ছিল জ¦ালানি এবং বিদ্যুৎ থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহার করা। সরকার আইএমএফের ঋণ ছাড়ের আগেই গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করে। জ¦ালানি তেলেও খুব বেশি লোকসানে নেই বিপিসির। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামও নিম্নমুখী।


বৈঠক সূত্র বলছে, আইএমএফ জানতে চেয়েছে তেলের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারদর বিবেচনা করে মূল্য সমন্বয় করা হলেও গ্যাসের ক্ষেত্রে কী করা হবে। তখন জ¦ালানি বিভাগের তরফ থেকে বলা হয়েছে, আগে তেলের মূল্য সমন্বয়ের প্রভাব বিবেচনা করে সরকার গ্যাসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চায়। তেলের মূল্য সমন্বয়ে আন্তর্জাতিক দর বিবেচনা করা হলে প্রতি মাসে মূল্য সমন্বয় করা হবে। এ ক্ষেত্রে তেলের মূল্য কমলে কমানো হবে এবং বাড়লে বৃদ্ধি করা হবে।


জ¦ালানি বিভাগ থেকে আইএমএফ প্রতিনিধিকে জানানো হয়, দেশে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের পাশাপাশি অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। স্থলভাবে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৬টি কূপ খননের মাধ্যমে দৈনিক ৬১৮ ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটা কূপ খননের মাধ্যমে গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এ ছাড়া গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করতে মডেল পিএসসি সংশোধনের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। দরপত্রের মাধ্যমে দ্রুত সাগরে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হবে


আন্তর্জাতিক বাজারে জ¦ালানি তেল, গ্যাস, সার কিংবা কয়লার দাম বাড়লেও ভর্তুকি বাড়ানো যাবে না বলে আইএমএফের শর্ত রয়েছে। এ ছাড়া জিডিপির অনুপাতে ভর্তুকির সর্বোচ্চ হার নির্ধারণ করে দিয়েছে সংস্থাটি। আইএমএফের শর্তপূরণে জুনের মধ্যে বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়ানোর চিন্তা করছে সরকার। এটি কার্যকর হলে চলতি বছরে চতুর্থবারের মতো বিদ্যুতের দাম বাড়বে।


সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ এপ্রিল প্রতিনিধি দলটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছে। সেখানে ভর্তুকির চাপ কমানোর জন্য বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সেপ্টেম্বর থেকে জ¦ালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে বলেও আইএমএফের পর্যালোচনাকারী প্রতিনিধি দলকে নিশ্চিত করেছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। আইএমএফের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ঋণচুক্তিতে ২০২৬ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ভর্তুকি পুরোপুরি প্রত্যাহার করার অঙ্গীকার করেছে সরকার। এ জন্য ধাপে ধাপে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানির দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

Post a Comment

Previous Post Next Post