দেশবাসীর উদ্দেশে আওয়ামী লীগের জরুরী বার্তা
দেশে এক সংকটময় অরাজক পরিস্থিতি চলছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই পরিস্থিতিতে দেশবাসীর জন্য বিবৃতি দিয়েছে দলটি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং দলের সভানেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা যে কোন পরিস্থিতিতে দেশবাসীর পাশে আছেন বলে জানানো হয়েছি ওই বিবৃতিতে।
বৃহস্পতিবার (০৩ অক্টোবর) আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক দীর্ঘ স্ট্যটাসের মাধ্যমে এ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগের বিবৃতি এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আওয়ামী লীগের আহ্বান এটি।
ওই বিবৃতিতে সেন্ট মার্টিনের প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মাটিতে অন্য কোনো দেশের পতাকা উড়তে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে আরেকটি যুদ্ধ হবে, স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ।
পাঠকদের জন্য পুরো বিবৃতিটি তুলে ধরা হলো-
প্রিয় দেশবাসী, আসসালামুআলাইকুম।
সবাই শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা নিবেন। জানি আপনারা ভালো নেই। দেশের সার্বিক অবস্থা চারদিকে সবার মাঝে এক সংকটময় অরাজক পরিস্থিতি তৈরী করেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং দলের সভানেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা যে কোন পরিস্থিতিতে আপনাদের পাশে আছেন এবং থাকবে ইনশাল্লাহ।
আপনারা সবাই মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে দেশ ও দেশের জনগনের জন্য দোয়া করবেন।
প্রিয় দেশবাসী, আপনারা সবই জানেন, সবই দেখেছেন। এখন হয়তো সবকিছু অনুধাবন করতে পারছেন, কি পরিস্থিতিতে দেশরত্ন শেখ হাসিনা দেশ ছেড়েছিলেন। ষড়যন্ত্রকারীরা আরও লাশ চেয়েছিলো। তিনি চাননি আর কোন বাবা-মায়ের বুক খালি হোক।
তাই সময়ের প্রয়োজনে এই সাময়িক পদক্ষেপ নিয়েছেন। আপনারা দেখেছেন, মহামান্য আদালতের রায় শিক্ষার্থীদের সব দাবীর পক্ষেই গিয়েছে। দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও আমাদের সরকার তাদের সকল দাবী মেনে নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচারের নিশ্চয়তা দিয়েছিলো।
নিহত সকল পরিবারের পাশে দাড়িয়েছিলো, আহতদের বিনা খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলো। তারপরও কেন এই অরাজকতা, এতো হত্যা, এতো ধ্বংসযজ্ঞ করা হলো? কারণ, এর পিছনে ছিলো ক্ষমতা দখলের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক এক ষড়যন্ত্র। আপনারা দেখেছেন ১৬ জুলাই থেকেই ছাত্রদের আন্দোলনকে হাইজ্যাক করে কিভাবে দেশের রাজনৈতিক অপশক্তি ও বিদেশী এজেন্টরা কিভাবে হত্যা ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে।
এমনকি ছাত্রদের উপর ৭.৬২ রাইফেল ব্যবহার করে গুলি চালিয়ে পরিস্থিতিকে অগ্নিগর্ভ করে তোলা হয়। কিভাবে ঢাকা শহরে অবস্থিত রাষ্ট্রীয় স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। কিভাবে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, বৌদ্ধ মঠে হামলা ও ভাংচুর চালানো হয়েছে।
কত নিষ্ঠুরভাবে পুলিশ ও সাংবাদিক হত্যা এবং মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, শিক্ষক, সাংস্কৃতিক কর্মীদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে। পাঁচই আগষ্ট কিভাবে বাঙালি জাতির মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সুতিকাগার, জাতীর পিতার স্মৃতি বিজড়িত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ধ্বংস করা হয়েছে।
বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন জাতীয় সংসদ ভবন ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। এছাড়া প্রধান বিচারপতির বাসভবন, নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরত্বপূর্ন ব্যাক্তিবর্গের সরকারি, বেসরকারি অফিস আদালত বাসভবন পোড়ানো ও লুটপাট করা হয়েছে। আপনারাই ভেবে দেখুন, এইসব সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের সাথে কোটা আন্দোলনের কি সম্পর্ক ছিলো।
যে পুলিশ বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে ভূমিকা রাখে, পরিকল্পিতভাবে কিভাবে তাদেরকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে এবং ৪৫০টি থানা ও অস্ত্রাগার লুট করা হয়েছে। নিষ্ঠুরভাবে একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলা পুলিশ অফিসারকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। কতজন পুলিশকে হত্যা করা হয়েছে এই সংখ্যাও জাতির সামনে এখনো সরকার প্রকাশ করছে না। এরসবই ছিলো ক্ষমতাদখলের একটি ষড়যন্ত্র। তখন সরকার আরও কঠোর হলে হয়তো আরও লাশ পরতো, আরও অনেক বাবা- মায়ের বুক খালি হতো। তাই মানুষের জানমাল রক্ষায় দেশরত্ন শেখ হাসিনা এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
প্রিয় দেশবাসী, আপনারা ইতিমধ্যেই শুনেছেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের একটি অনুষ্ঠানে এই অবৈধ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস বলেছেন, এই আন্দোলন একদিনে সৃষ্টি হয়নি। এর পিছনে দীর্ঘ পরিকল্পনা ছিলো এবং এর মাষ্টারমাইন্ড হিসাবেও একজনকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অনেকদিনের পরিকল্পনার ফসল নাকি তার এই সরকার।
এ থেকে স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে এটা ছাত্রদের কোটার আন্দোলন ছিলোনা। তাই সকল দাবী মেনে নেয়ার পরও তারা পরিকল্পিতভাবে সারাদেশে অরাজকতা চালিয়েছে। দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি দেখে আপনারাও নিশ্চয় এখন অনুধাবন করতে পারছেন। আপনারা বুঝতে পারছেন, কেন সেন্টমার্টিন দ্বীপকে সংরক্ষিত করে কার্যত জনগনের যাতায়াতের জন্য নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
কেন পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিকল্পিতভাবে একের পর এক সহিংসতা তৈরী করা হচ্ছে! বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আপনাদের আশ্বস্ত করছে, আমাদের বুকে এক বিন্দু রক্ত থাকতে বাংলাদেশের মাটিতে অন্য কোন দেশের ঘাঁটি হবেনা। এই দেশ ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত ও আড়াই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে কেনা। এই দেশ বাঙালির ২৪ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল। অন্য কোন দেশের পতাকা এই মাটিতে উড়তে দেয়া হবেনা। প্রয়োজনে আরেকটি যুদ্ধ হবে, স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ।
Post a Comment